এক বাটি তাজা স্বাদ এবং পুষ্টির মিক্সডআপ – মিক্স প্রোটিন সালাদ

Salad Flexi

অনেকেই আছে স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য ডায়েট প্ল্যান করছেন অথবা রেগুলার খাবার থেকে সরে এসে সালাদ খাচ্ছেন। কিন্তু সাধারণত যে সালাদ আমরা খেয়ে থাকি, তাতে অনেক সময় প্রোটিন, ক্যালরি বা ভিটামিনের ব্যালেন্স ঠিকঠাক মতো হয় না। যার ফলে যে কারণে আসলে সালাদ খাওয়া হচ্ছে, সেই কাজেই লাগে না। আজকে আমি এমন একটা সালাদের রেসিপি শেয়ার করবো, যেটাতে ওজন নিয়ন্ত্রন অর্থাৎ ডায়েটের পাশাপাশি ত্বকে উজ্জলতা ও শরীরের এনার্জি লেভেলকে আরো বুস্টআপ করবে।  এই সালাদটি প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, এবং মিনারেলসের এক চমৎকার কম্বিনেশন। আসুন, এক নজরে দেখে নিই এক বাটি মিক্স প্রোটিন সালাদের পুষ্টিগুণ:

১. মুরগীর মাংস (Boneless Chicken):

এই সালাদে ব্যবহৃত মুরগীর মাংসটা থাকে বাটার দিতে সর্টেড করা। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু চিকেন এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ৪৫ কিলো ক্যালরি। পাশাপাশি রয়েছে প্রোটিন ও ভিটামিন বি ৬ (Vitamin B6)। যা দেহের মেটাবলিজমকে আরো বেশি উন্নত করে। এছাড়াও ভিটামিন বি ৬ স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।

২. চিংড়ী (Black Tiger Shrimp):

এখানে চিংড়ীগুলোকেও বাটার দিয়ে সর্টেড করা হয়ে থাকে। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু চিংড়ী এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ৩০ কিলো ক্যালরি। পাশাপাশি এখানে প্রোটিন তো আছেই। সেই সাথে আছে ওমেগা ৩ (Omega-3) ফ্যাটি এসিড। যেটা কিনা হার্ট এবং ব্রেণের জন্য খুবই উপকারী। এই ফ্যাটি এসিডের আরো অনেক গুণাগুণ রয়েছে।  ডিপ্রেশন, ডিমেনশিয়া কিংবা হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং আর্থ্রাইটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস থেকে রক্ষা করতে পারে।

৩. পনির (Cheese):

চিজ বা পনির যাই বলি না কেনো, এর কিন্তু বিশাল গুণাগুণ রয়েছে। এই চিজের মধ্যে রয়েছে পটাসিয়াম। যা শরীরে রক্তরসের ভারসাম্য বজায় রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে যা হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু চিজ এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ৬০ কিলো ক্যালরি। আরো আছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুত করে। আরো আছে ভিটামিন এ (Vitamin A)। ভিটামিন এ -এর গুণাগুণ সম্পর্কে আশা করি সবাই জানেন। এই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চোখ, দাঁত, ত্বক এর জন্য ভিটামিন এ খুবই জরূরী।

৪. মাশরুম (Mushroom):

মাশরুমে কোলেস্টরেল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টটিন, এনটাডেনিন, কিটিন এবং ভিটামিন বি,সি ও ডি থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার) ও হৃদরোগ নিরাময় হয়। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু মাশরুম এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ৫ কিলো ক্যালরি। মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের এমন সমন্বয় আছে যা শরীরের ইমিউন সিষ্টেমকে উন্নত করে। এছাড়াও মাশরুমকে বলা হয়ে থাকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার। কেননা নিয়মিত মাশরুম খেলে ব্লাড সুগার কমিয়ে আনা সম্ভব।

৫. কর্ণ (Sweet Corn):

বাংলায় বলে ভুট্টা আর ইংরেজীতে কর্ণ। অবশ্য এর বিভিন্ন জাতও রয়েছে আলাদা। সেদিকে না যাই। আধুনিক সুপার ডায়েটের এক অন্যতম উপাদান হিসেবে ধরা হয় এই সুইট কর্ণ কে। টেস্টের দিক থেকে এটা যেমন সকলের মন কেড়েছে। তেমনি এর গুণাগুণও কিন্তু অসামান্য। ফাইবার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, শর্করা, ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই উপাদানটাকে প্রতিবেলাতেই সাইড ডিশ অথবা মেইন ডিশের সাথে এড করে খাওয়া যেতে পারে। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু কর্ণ এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ১২ কিলো ক্যালরি।

৬. সেদ্ধ ডিম (Boiled Egg):

পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিমের জুড়ি নেই। আর গবেষণায় দেখা গেছে, সিদ্ধ ডিম দুই সপ্তাহের মধ্যে ১১ কেজি পর্যন্ত ওজন কমাতে পারে। এক বাটি সালাদের হিসেবে যে পরিমাণ সেদ্ধ ডিম এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ৭০ কিলো ক্যালরি। সেদ্ধ ডিমের মধ্যে প্রোটিন ও নয় ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। এটি শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া ভিটামিন বি১২, ডি ও রিবোফ্লাভিন রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য গঠনে সাহায্য করে। পাশাপাশি সেদ্ধ ডিম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য গঠনে ও উন্নতি সাহায্য করে।

৭. সেদ্ধ ছোলা (Boiled Chickpea):

ছোলায় এমনিতেই আঁশের পরিমাণ বেশি থাকে। সাধারণত মসলায় রান্না করা ছোলার চেয়ে কাঁচা ছোলায় অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট বেশি থাকে। ওজন ধরে রাখা এবং আলসারের সমস্যা থাকলে কাঁচা ছোলা খাওয়া ভালো। এই সেদ্ধ ছোলা শক্তি বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যবান করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু সেদ্ধ ছোলা এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ৩৫ কিলো ক্যালরি। এছাড়াও ফাইবারও আছে যা হজমশক্তি বাড়ায়। এছাড়াও আছে আয়রণ, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।

৮. গ্রীন ক্যাপসিকাম (Green Capsicum):

গ্রীন ক্যাপসিকাম খেলে কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার মাত্রা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। সেই সঙ্গে এতে থাকা লুটেইন নামক একটি উপাদান দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সহায়তা করে। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিনের খাবারে ক্যাপসিকাম খাওয়া সবচেয়ে ভালো অভ্যেস। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু গ্রীন ক্যাপসিকাম এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ৫ কিলো ক্যালরি। সবুজ ক্যাপসিকামকে ভিটামিন সি-এর সেরা উৎস হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। সবুজ ক্যাপসিকাম খেলে উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

৯. টমেটো (Tomato):

টমেটোকে বলা হয়ে থাকে একটা পাওয়ারহাউজ। টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, লাইকোপেন, ভিটামিন-কে, ফলিক এসিড, ক্রোমিয়াম ও আরও গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনসমূহ। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু টমেটো এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ৫ কিলো ক্যালরি। এতে কোন ফ্যাট থাকেনা এবং কোলেস্টেরল ও সোডিয়ামের পরিমানও খুব কম থাকে। চর্মরোগের জন্য টমেটো অত্যন্ত কার্যকর উপাদান। নিয়মিত টমেটো খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও টমেটোর গুণগান অপরিসীম।

১০. পেঁপে (Papaya):

শরীর সুস্থ রাখতে ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে কাঁচা পেঁপে দারুণ কার্যকর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষের ভেতরের সৌন্দর্যের যত্ন নিলে তা আপনা-আপনি বাইরের সৌন্দর্য হিসেবে ফুটে ওঠে। মানুষের শরীরের ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে পারে—এমনই এক দুর্দান্ত উপাদান হচ্ছে কাঁচা পেঁপে। কাঁচা সবুজ পেঁপেতে নানা রকম প্রাকৃতিক এনজাইম থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি এনজাইম হচ্ছে সাইমোপ্যাপিন ও প্যাপিন। এই দুটি এনজাইম প্রোটিন চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙতে সাহায্য করে। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু পেঁপে এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ৮ কিলো ক্যালরি।

১১. শসা (Cucumber):

পুষ্টিবিদদের মতে, একটি শসার ৯৬ শতাংশই থাকে পানি। প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় শরীর আর্দ্র রাখতে শসা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শসায় থাকে ভিটামিন কে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও রক্তসঞ্চালনে সাহায্য করে। শসায় আরো রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। এ ছাড়াও পটাশিয়াম আছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে পরোক্ষভাবে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এ ছাড়া শসায় রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার, যা হজমের জন্য ভালো। পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়ক। এতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডস, ট্যানিন, যা প্রদাহ কমাতে কার্যকর। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু শসা এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ৪ কিলো ক্যালরি।

১২. গাজর (Carrot):

বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে১, পটাশিয়াম, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে গাজরে। ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ গাজর বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার যেমন প্রোস্টেট, কোলন এবং পাকস্থলীর ক্যানসার থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়াও গাজর রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এক বাটি সালাদের হিসেবে যতটুকু গাজর এখানে ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে ১২ কিলো ক্যালরি। গাজরে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ এবং পিগমেন্টেশনকে দূরে রাখে। এছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য অপরিহার্য।

কেন এই সালাদ আপনার জন্য পারফেক্ট?

এত এত পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ এই মিক্স প্রোটিন সালাদ শুধু যে সুস্বাদু নয়, বরং এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে, ত্বক উজ্জ্বল রাখবে, এবং আপনার এনার্জি লেভেল বাড়িয়ে তুলবে। দিনের যেকোনো সময় এই সালাদ একটি স্মার্ট চয়েস হতে পারে।

এখনই ট্রাই করুন এবং সুস্বাস্থ্যের পথে এক ধাপ এগিয়ে যান! স্বাস্থ্য সচেতনতায় সালাদ ফ্লেক্সি (Salad Flexi) আছে আপনার পাশে। 🥗